এখানে আমরা খলিফা শব্দের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব। আমরা জানি ইসলামে খেলাফত ব্যবস্থা, একটি মূল্যবান পদ্ধতি, এর রয়েছে তাৎপর্য পূর্ণ অর্থ, রয়েছে বিশাল ভূমিকা, রয়েছে বিশাল দায়িত্বশীল অবস্থান।
[উল্লেখ্য, এখানে আমরা ইসলামের পারিভাষিক শব্দ খলিফা ও খেলাফত নিয়ে আলোচনা করব। সাধারণ (Traditional) অর্থ বা আভিধানিক অর্থ: 1. খলিফা= প্রতিনিধি/ রিপ্রেজেন্টেটিভ (Representative), 2. পিছনের ব্যক্তি (ক্রম বিবেচনায়)- এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা নয়।]
বাংলাদেশে শব্দটিকে লেজে গোবরে মেখে ফেলে এমন একটি অবস্থানে নেওয়া হয়েছে, যেটাকে সাধারণ জনগণের কাছে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এবং উদাহরণ হিসেবে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসকেই পেশ করা হয় কিন্তু কার্যত: উপার্জনের একটি বিশাল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উপার্জনের এ পদ্ধতিটি অনেকটা দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প ও চিরযৌবনা যার সাথে রিটায়ারমেন্ট/ অবসর ইত্যাদি শব্দ সমূহের ব্যবহার কল্পনাতীত। গবেষণায় দেখা গেছে, 'খলিফা এবং খেলাফত' শব্দ দুটি ইসলামের খলিফা ও খেলাফত ব্যবস্থা না হলেও উপমহাদেশে এটি একটি সহি নিয়তেই শুরু হয়েছিল, আর সেটি ছিল- মানুষের আত্মশুদ্ধি (ইসলাহে নফস)। পরবর্তীতে বিষয়টি রূপান্তরিত হয়ে লেবাসধারী, অর্থলিপ্সু মোল্লাদের লোলুপ দৃষ্টিতে পড়ে যায়, হয়ে ওঠে অর্থ উপার্জনের একটি বিশাল উৎস। অন্তরের উদ্দেশ্য আল্লাহই ভাল জানেন, অর্থের হাতছানি 'খলিফা ও খেলাফত' শব্দদ্বয় কোন কায়দায় একবার অনুপ্রবেশ ঘটা বেষ্টিত-পরিবারের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ দেয়নি। যে পরিবারে 'খলিফা ও খেলাফত' শব্দদ্বয়ের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সেখান থেকে শব্দ দু'টি ও আঞ্চলিক কার্যক্রম পরিবারের বাইরে আসার সুযোগ পায়নি।
ইসলামের খলিফা শব্দের ব্যবহার খেলাফতের দায়িত্ব
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
অর্থ- স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি, তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে অশান্তি ঘটাবে এবং রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার সপ্রশংস স্তুতিগান ও পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি যা জানি তা তোমরা জানো না। (কোরআন: 02: 30)
কোরানিক বিশ্লেষণে দেখা যায় পৃথিবীর বুকে মানুষ আল্লাহর খলিফা।কোরআনের আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে খেলাফত/خليفه এবং আরদ/ভূপৃষ্ঠ/ارض দুটোর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ভূপৃষ্ঠ বাদে খেলাফতের অস্তিত্ব কল্পনাহীন আর খেলাফত ব্যবস্থা হতে গেলে সেখানে পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ/ পৃথিবীর বুক দরকার।
কোরআনের অপর আয়াতে নবুওয়াতি দায়িত্ব ও নবী প্রেরণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ-
অর্থ- মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও অপর সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করার জন্য তিনিই পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহ তাঁর রাসূল প্রেরণ করেছেন। (কোরআন: 09: 33)
এখান থেকে বোঝা যায় সকল সকল মতবাদ এর উপরে ইসলামী আদর্শকে বিজয়ী রূপে প্রতিষ্ঠিত করা নবুওয়াতি দায়িত্বের অন্যতম। তাই নবী জীবনের ধারাবাহিকতা পর্যায়ক্রমে দেখা যায় মক্কা থেকে মাদানী জীবনের সফলতার ক্রমবিকাশ মদিনা রাষ্ট্র । তাই নবীর অনুসরণে আমাদেরও এটি একটি অন্যতম দায়িত্ব।
অপর বিশ্লেষণে দেখা যায়, সকল দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত/জয়যুক্ত করতে হলে অপরাপর মতবাদ মতবাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা বিদ্যমান, নতুবা কার জয় কার পরাজয় এটি নিরূপণ করা অসম্ভব। ইসলামের দৃষ্টিতে আদর্শিক বিজয়ই বড় বিজয় সুতরাং অপরাপর মতবাদকে আঘাত করে মুছে দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না । এক্ষেত্রে অন্য যে প্রশ্নটি এসে যায়, সেখানে ইসলামের উত্তর: ইসলাম শুধু প্রতিরক্ষামূলক; আক্রমণাত্মক কার্যক্রমে ইসলাম নেই।
সুন্নত, রাসুলের জীবন ও ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ
রাসুলের জীবনের পরম্পরা ধারাবাহিকতা মক্কী জীবন থেকে মাদানী জীবনের কার্যবিধি, সেখানে ইকামতে দ্বীনের অবস্থান সহ পুরো রাসুলের জীবনী দেখলে স্পষ্ট ভাবে বুঝে আসে- রাসুলের জীবন থেকেই খলিফা ও খিলাফত ব্যবস্থার মানদণ্ড গৃহীত হয়েছে। আমাদের জন্যও ইসলামের মানদণ্ড-
1. কোরআন
2. সুন্নাহ ও
3. ما انا عليه واصحابي/ উম্মতের জন্য রাসূলের পথ এবং সাহাবীদের পথ
1. কোরআন
2. সুন্নাহ ও
3. ما انا عليه واصحابي/ উম্মতের জন্য রাসূলের পথ এবং সাহাবীদের পথ
সুতরাং কোরানিক খেলাফত, রাসুল সাঃ এর জীবন ভিত্তিক খেলাফত এবং সাহাবায়ে আজমাঈন সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমদের জীবনী ভিত্তিক খেলাফত নিয়ে আপনাদের কম-বেশি জ্ঞান রয়েছে। এখানে আমি সে বিষয়ে আলোচনায় যাব না। নির্দিষ্ট মূল নীতি বিশ্লেষণ করলে আমরা শব্দদ্বয়ের ইসলামী ব্যাখ্যা খুজে পাব।
1. বংশীয় পরিচিতি পদ-পদবী যদি হয় খলিফা, সেক্ষেত্রে পরিচিতি-পদবী ইসলামে নিষেধ নেই কিন্তু খলিফা শব্দের ওজন কতটুকু? এখানে প্রশ্ন তোলাও প্রশ্নবোধক।
2. ইসলাম যেকোনো কর্ম এবং কাজ করে জীবন ধারণ কে উৎসাহ যুগিয়েছে, কোন পেশাকেই ইসলাম ঘৃণা করে না। দর্জি এবং সেলাই কাজ ইসলামে সম্মানিত পেশা কিন্তু এর নাম যদি হয় খলিফা পেশা, তখন তো একই কথা এসে যায়, এখানে প্রশ্ন তোলাও প্রশ্নবোধক।
3. পীরের বংশে জন্ম নিলে অথবা পীরের সুদৃষ্টিতে থাকলে খলিফা, যেটিকে ইসলামের খলিফা হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে, এখানে বিচার বিবেচনাবোধ আপনাদের সকলের। বিচার বিবেচনার শর্ত হচ্ছে, কোরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীদের জীবনচরিত এর মান দন্ড এবং এই মূলনীতির কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ।
নিম্নে এ বিষয়ে দুটি কথা-
স্কলারদের বক্তব্যের ফুলঝুরি নিয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই বরং ঈমান উদ্দীপক কিন্তু আমাদের বক্তব্য আমাদের এখানে খিলাফত ব্যবস্থার তথাকথিত প্রয়োগ নিয়ে।
নিম্নে এ বিষয়ে দুটি কথা-
স্কলারদের বক্তব্যের ফুলঝুরি নিয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই বরং ঈমান উদ্দীপক কিন্তু আমাদের বক্তব্য আমাদের এখানে খিলাফত ব্যবস্থার তথাকথিত প্রয়োগ নিয়ে।
বক্তব্যের ফুলঝুরি
1. خلافه على منهاج النبوه/ নবী জীবনের অনুকরণে খিলাফত ব্যবস্থার দায়িত্ব উপলব্ধি
2. খোলাফায়ে রাশেদা- আবু বকর, ওমর, ওসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুম- চার খলিফা ও তাদের খেলাফত
3. চার খলিফার খেলাফতের ধারাবাহিকতা ও শূরা ব্যবস্থাপনা
3. চার খলিফার খেলাফতের ধারাবাহিকতা ও শূরা ব্যবস্থাপনা
4. ওমর রা: এর শাসনামল: ব্যক্তি স্বার্থহীনতা, ন্যায় বিচার ও কীর্তিগাথা উদাহরণের অপার দৃষ্টান্ত
5. খেলাফতের ধারাবাহিকতা ও তুর্কি খেলাফতের সমাপ্তি
কিন্তু আমাদের এখানে!
* আমাদের সাধারণ জনতার বিশাল প্রশ্ন, প্রথমে আমাদেরকে ইসলামের স্কলাররা বুঝিয়ে থাকেন 'খলিফা ও খেলাফত' কোরআন হাদিস দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়, এটা মারেফাতের বিষয়।
* ইসলামের শূরা ব্যবস্থাপনা এখানে অচল, কার পরে কে/ কার থেকে কে/ অর্থাৎ- শাজারানামা - একনায়কতান্ত্রিক: কারো সাথে পরামর্শের বিষয় নেই।
thanks
ReplyDeletePost a Comment